শিরোনামঃ
সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা
গণ অধিকার পরিষদ থেকে বহিস্কৃত নেতার এনসিপিতে যোগদান
বরেন্দ্র সময়
- প্রকাশের সময় : ০৫:১৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫
- / ২০৬ জন দেখেছেন
জাতীয় নাগরিক পার্টি’র (এনসিপি’র) নওগাঁ জেলা সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) রাতে এনসিপির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ৩৫ সদস্যের তালিকা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়েছে। কমিটিতে প্রধান সমন্বয়কারীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মনিরা শারমিকে। এবং যুগ্ম সমন্বয়কারী তিন জন ও সদস্য করা হয়েছে ৩১ জনকে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির (এনসিপির) সদস্য সচিব আখতার হোসেন এবং মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমের যৌথ স্বাক্ষরে ঘোষিত কমিটি আগামী তিন মাসের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
কমিটির ২৩ নং সদস্য করা হয়েছে গোলাম রাব্বানী নামে এক ব্যক্তিকে। এরপর শুরু হয় সমালোচনা আলোচনা।
অভিযোগ গোলাম রাব্বানীকে গণ অধিকার পরিষদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিতর্কিত হওয়ার কারণে তাকে বহিষ্কার করা হয়।
আর এই কারণে সদ্য ঘোষিত এনসিপির কমিটিতে স্থান পাকাপোক্ত করতে বহিস্কৃত ঢাকতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বিতর্ক ওঠা গোলাম রাব্বানী এমন অভিযোগ গণ অধিকার পরিষদের একাধিক নেতার।
এদিকে নিজেকে গণ অধিকার পরিষদের রাজনীতি থেকে সরে এসে এনসিপিতে যোগদানের ঘোষণা দিয়ে শুক্রবার (২০জুন) সকাল দশটায় নওগাঁ শহরের একটি স্থানীয় রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলন করেছেন গোলাম রাব্বানী।
এর আগে গত ৫ জুন তাকে গণ অধিকার পরিষদের নওগাঁ জেলা শাখার আহ্বায়ক পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। গণ অধিকার পরিষদের দপ্তর সম্পাদক শাকিল উজ্জামানের স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় আওয়ামী লীগের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকার কারণে গণ অধিকার পরিষদের নওগাঁ জেলার আহ্বায়ক মো: গোলাম রাব্বানী কে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
তবে বহিষ্কার বিষয়টি অস্বীকার করে নিজে থেকে পদত্যাগ করেছেন বলে দাবি করেন গোলাম রাব্বানী।
জানা যায়, গোলাম রাব্বানী নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার আবাদপুকুর এলাকার মৃত আজিজার রহমানের ছেলে। ২০২৪ সালে মে মাসে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের তৃতীয় ধাপের চেয়ারম্যান নির্বাচনে মোটর সাইকেল প্রতীকে নির্বাচন করেন গোলাম রাব্বানী। সেই নির্বাচনে দুই হাজার ৭২৪ ভোট পেয়ে জামানত হারান তিনি। নির্বাচনের সময় একাধিক পত্রিকায় গোলাম রাব্বানীর পক্ষে ভোট চেয়ে নিউজ প্রকাশ করা হয়েছিল। সেখানে তুলে ধরা হয়েছিল গোলাম রাব্বানীর পরিচয় ও পারিবারিক ইতিহাস। কখনও তাকে রাণীনগর উপজেলা শাখা আওয়ামী লীগের সদস্য আবার কখনও সমর্থক পরিচয় দিয়ে নিউজ প্রকাশ করা হয়। এছাড়া তুলে ধরা হয় তার পরিবারের আওয়ামীলীগের সাথে সম্পর্কের ফিরিস্তি।
গোলাম রাব্বানী ছিলেন সুবিধা বাদী একজন ব্যক্তি। আওয়ামীলীগের সাথে ছিল গভীর সম্পর্ক। ছিল সবসময় তাদের সাথে চলাফেরা। অথচ এমন একটা বিতর্কিত ব্যক্তিকে গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক করায় নওগাঁ জেলা গণঅধিকার পরিষদ ও এর অঙ্গসংগঠনের একাধিক নেতা প্রতিবাদ করেছিলেন সে সময়।
যুব অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক কমিটি ও রাজশাহী আঞ্চলিক উপ কমিটির সদস্য এসএম সাব্বির হোসেন বলেন, নওগাঁ জেলা গণধিকার পরিষদের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পরপরই আমরা জানতে পারি গোলাম রাব্বানীর আওয়ামী লীগের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ততা ছিল। পরবর্তীতে আমি নিজে কেন্দ্রকে বিষয়টি অবগত করি। সর্বশেষ গোলাম রাব্বানীকে আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ত থাকার কারণে গত ৫ জুন গণধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদকের সিগনেচারে তাকে বহিষ্কার করা হয়।
আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ত থাকার কারণে বহিষ্কার করার বিষয়টি অস্বীকার করেন গোলাম রাব্বানী। তিনি মুঠোফোনে বলেন, আমি গত ১১ জুন গণ অধিকারে লিখিত পদত্যাগপত্র জমা দেই। এরপরও দলটি তা গ্রহণ না করে তারা ব্যাকডেটে মিথ্যে বহিষ্কার আদেশ লিখে ১৮ তারিখে প্রচার করলো।
তিনি বলেন, আমি গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক থাকা অবস্থায় এনসিপির লোকদের সাথে প্রোগ্রাম করেছি আমাদের ব্যানারেই। তার এমন মন্তব্যে আপনি তাহলে সমঝোতা করে চলেন? যেমন আওয়ামী লীগের আমলে তাদের সাথে সমঝোতা করে চলেছেন এমন বিষয়ে তিনি একটু উত্তেজিত হয়ে বলেন, আমি এখন একটি রাজনৈতিক দলে আছি, আমি পদধারী একজন ব্যক্তি। আমি এখন আর সমঝোতার মধ্যে নেই, যখন দল করিনি তখন সমঝোতা ছিল। আমার এনসিপির নীতি আদর্শ ভালো লেগেছে। এটা আমার নৈতিক অধিকার। আমি স্বাধীন বাংলাদেশে যেকোনো দল করতে পারি, তাই এনসিপির নওগাঁ জেলা কমিটিতে যোগদান করেছি।
তিনি বলেন, অভ্যুত্থানের পর আমার নীতি আদর্শে যে দল ভালো লাগবে, সেই দল করব। তার মানে জামায়াত ও বিএনপিও করবেন? এমন প্রশ্ন কৌশলে এড়িয়ে যান তিনি।
আওয়ামী লীগের আর কেউ অন্য দলের সাথে সম্পৃক্ত নেই, শুধু আমার বেলায় এমন কেন? এনসিপির কার্যক্রম ভালো না লাগলে আর রাজনীতি করবো না।
একসময় এই প্রতিবেদককে তার সাথে দেখা করতে বলেন তিনি।
জানতে চাইলে এনসিপির নওগাঁ জেলা শাখার প্রধান সমন্বয়কারী মুনিরা শারমিন মুঠোফোনে বলেন, গোলাম রাব্বানী কে কমিটিতে নেওয়া হয়েছে গণ অধিকার পরিষদের রাজনৈতিক পরিচয় দেখে। যেহেতু গণ অধিকার পরিষদ আওয়ামী বিরোধী ছিল। তাই গণ অধিকার পরিষদ থেকে পদত্যাগ করে আসায় তাকে নেওয়া হয়েছে।
তারপরও তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সাথে সরাসরি সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেলে আমরা ব্যবস্থা নিব। শুধু গোলাম রাব্বানী নয়, আগামীতে এনসিপির আহ্বায়কের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা পর্যন্ত কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেলে তাকে আমরা কমিটিতে রাখবো না।
এদিকে সংবাদ সম্মেলনে গোলাম রাব্বানী বলেন, “আমি ২০২১ সাল থেকে গণ অধিকার পরিষদের রাজনীতির সাথে যুক্ত। এটাই আমার প্রথম রাজনৈতিক প্লাটফর্ম। কিন্তু দলটির অভ্যন্তরীণ অগণতান্ত্রিক আচরণ, চাপ প্রয়োগ এবং নেতিবাচক রাজনীতির কারণে আমি গণ অধিকার পরিষদ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সরে দাঁড়িয়েছি।”
তিনি দাবি করেন, “যেহেতু আমি একজন ব্যবসায়ী, বিভিন্ন সময় আমাকে চাপে ফেলে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ এবং অনুদান দিতে বাধ্য করা হতো। তবে আমি কখনোই আওয়ামী লীগের সদস্য বা দায়িত্বশীল পদে ছিলাম না।”
রাব্বানী বলেন, “২০২৪ সালের আগস্ট মাসে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতা খন্দকার তারিকুল ইসলাম দীপুর মাধ্যমে পরিচিত হই জেলা সংগঠক দেওয়ান মাহবুব আল হাসান সোহাগ ভাইয়ের সাথে। তার নেতৃত্ব এবং তরুণদের নিয়ে নতুন রাজনৈতিক ভাবনার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে আমি, সুজন মণ্ডল ও জিয়াউর রহমান মিলে এনসিপিতে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।”
ট্যাগ :