, শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫, ৪ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনামঃ
চরম ভোগান্তিতে এলাকাবসী

রাজশাহীর তানোর উপজেলার অমৃতপুর রাস্তার বেহাল দশা

বরেন্দ্র সময়
  • প্রকাশের সময় : ০৭:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫
  • / ১৯৮ জন দেখেছেন

সামান্য বৃষ্টিতে হাঁটুপানি। কাঁদায় চলাচলের অযোগ্য হয়ে যায় রাজশাহীর তানোর উপজেলার কলমা ইউনিয়নের অমৃতপুর গ্রামের ভিতর দিয়ে যাওয়া কাঁচা মাটির রাস্তা।

গত দুই বছর ধরে একটি কালভার্ট ভেঙে রয়েছে। সেদিকে আজও দায়িত্বশীলদের নজরে পড়েনি। ফলে একমাত্র রাস্তা দিয়ে গ্রামে চলাফেরায় মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। বর্ষা মৌসুমে সেই দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়। সারা দেশে রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হলেও এই গ্রামে এখনো সেই ছোঁয়া লাগেনি।

প্রাচীন এই গ্রামে রয়েছে একটি দাখিল মাদ্রাসা, একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি গ্রামীণ হাট ও ফুটবল খেলার মাঠ। এই গ্রামের গ্রামীণ সাধুর হাটটি সপ্তাহে শনিবার ও মঙ্গলবার বসে।সেই হাটে ৪ থেকে ৫ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয় ও বিক্রয় করতে আসে। এই সেই ঐতিহ্যবাহী হাটে আসতে হলে কাঁচা রাস্তা দিয়ে আসতে হয়। কিন্তু এই সাধুর হাটটি থেকে সরকারিভাবে ইজারা দিয়ে প্রতি বছর রাজস্ব আয় করে থাকে সরকার।

রাজশাহী

এই গ্রামের রাস্তাটি এখনও পাকাকরণ করা হয়নি। ফলে রাস্তাটির বেহাল দশার কারণে গ্রামটির সার্বিক উন্নয়ন থমকে আছে। দ্রুতই এ জনগুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ রাস্তার আধুনিকায়ন করতে সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি কামনা করে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন গ্রামের  হাজারও বাসিন্দা।

সরেজমিন দেখা গেছে, তানোর উপজেলার ১ নম্বর  কলমা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের অর্ন্তভুক্ত অমৃতপুর গ্রামটি। ওই গ্রামের হাজীর মোড় থেকে বিলবাতা শিহাবের বাড়ি যাওয়া পর্যন্ত  প্রায় দেড় কিলোমিটার এবং সাধুর হাট থেকে চন্দনকোঠা গ্রাম পর্যন্ত দুই কিলোমিটার মাটির কাঁচারাস্তা। ওই রাস্তা দিয়ে শুষ্ক মৌসুমে কোনোমতে চলাচল করা গেলেও বর্ষা মৌসুমে রাস্তার খানাখন্দ ও গর্ত ভরে যায় বৃষ্টির পানিতে। তখন দেখে বোঝার উপায় থাকে না যে এটি রাস্তা নাকি ফসলের জমি। রাস্তার বেহাল দশার কারণে ভ্যান কিংবা অটোগাড়ি যেতে চায় না। নিরুপায় হয়ে কাঁদা মাটি দিয়ে পায়ে হেঁটে স্কুল-কলেজে যেতে হয় শিক্ষার্থীদের।

বর্তমানে বর্ষা মৌসুমে রাস্তাটি কাদামাটি ও বৃষ্টির পানির সংমিশ্রণে কাদার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। স্বাধীনতার এত বছর পরও পাকাকরণ করা হয়নি রাস্তাটি। জনপ্রতিনিধিরা ভোটের সময় প্রতিশ্রুতি দিলেও ভোটের পর আর তাদের দেখা মেলে না। স্থানীয়দের অভিযোগ, সবাই মিলে একাধিকবার স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার, উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় সংসদ সদস্যের কাছে রাস্তাটি পাকাকরণের জন্য দাবি জানিয়েছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা জুয়েল আহমেদ  বলেন, আমাদের জন্মের বহু বছর আগে পুরাতন এই কাঁচা রাস্তাটি রয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতে কিছু কিছু এলাকায় হাঁটু পর্যন্ত কাদা হয়ে যায়। এছাড়াও পাশের মাঠের সব ফসল এই রাস্তা দিয়েই বাড়ি নিতে হয়। এই রাস্তা দিয়েই কৃষিপণ্য বাজারজাত করা হয়। আমাদের এ কষ্ট কবে দূর হবে তার কোনো ঠিক নেই বলে আক্ষেপ করেন তিনি।

স্থানীয় শিক্ষক মুজিবর রহমান বলেন, প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে শতাধিক শিক্ষার্থী বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করে। তাদের চলতে খুবই সমস্যা হয়। জরুরি সেবার কোনো যানবাহন বা যেকোনো গাড়ি গ্রামে প্রবেশ করতে পারে না। অতি প্রাচীনকালের রাস্তাটি পাকাকরণ এখন সময়ের দাবি।

ওই এলাকার বাসিন্দা মামুনুর রশীদ বলেন,  অমৃত পুর গ্রামের ভিতর দিয়ে যে সড়কটি আছে সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বৃষ্টির দিনে রাস্তাটি ব্যবহারের একেবারে অনুপযোগী হয়ে পড়ে।

এ বিষয়ে তানোর উপজেলার কলমা ইউপি চেয়ারম্যান খাদেমুন্নবী বাবু চৌধুরী বলেন, আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবার পর কয়েকটি পাকারাস্তা সংস্কার করা হয়েছে। এখন পর্যায়ক্রমে মাটির কাঁচা রাস্তা পাকাকরণের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানানো হবে।

তানোর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) লিয়াকত সালমান বলেন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

ট্যাগ :

শেয়ার করুন

চরম ভোগান্তিতে এলাকাবসী

রাজশাহীর তানোর উপজেলার অমৃতপুর রাস্তার বেহাল দশা

প্রকাশের সময় : ০৭:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫

সামান্য বৃষ্টিতে হাঁটুপানি। কাঁদায় চলাচলের অযোগ্য হয়ে যায় রাজশাহীর তানোর উপজেলার কলমা ইউনিয়নের অমৃতপুর গ্রামের ভিতর দিয়ে যাওয়া কাঁচা মাটির রাস্তা।

গত দুই বছর ধরে একটি কালভার্ট ভেঙে রয়েছে। সেদিকে আজও দায়িত্বশীলদের নজরে পড়েনি। ফলে একমাত্র রাস্তা দিয়ে গ্রামে চলাফেরায় মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। বর্ষা মৌসুমে সেই দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়। সারা দেশে রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হলেও এই গ্রামে এখনো সেই ছোঁয়া লাগেনি।

প্রাচীন এই গ্রামে রয়েছে একটি দাখিল মাদ্রাসা, একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি গ্রামীণ হাট ও ফুটবল খেলার মাঠ। এই গ্রামের গ্রামীণ সাধুর হাটটি সপ্তাহে শনিবার ও মঙ্গলবার বসে।সেই হাটে ৪ থেকে ৫ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয় ও বিক্রয় করতে আসে। এই সেই ঐতিহ্যবাহী হাটে আসতে হলে কাঁচা রাস্তা দিয়ে আসতে হয়। কিন্তু এই সাধুর হাটটি থেকে সরকারিভাবে ইজারা দিয়ে প্রতি বছর রাজস্ব আয় করে থাকে সরকার।

রাজশাহী

এই গ্রামের রাস্তাটি এখনও পাকাকরণ করা হয়নি। ফলে রাস্তাটির বেহাল দশার কারণে গ্রামটির সার্বিক উন্নয়ন থমকে আছে। দ্রুতই এ জনগুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ রাস্তার আধুনিকায়ন করতে সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি কামনা করে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন গ্রামের  হাজারও বাসিন্দা।

সরেজমিন দেখা গেছে, তানোর উপজেলার ১ নম্বর  কলমা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের অর্ন্তভুক্ত অমৃতপুর গ্রামটি। ওই গ্রামের হাজীর মোড় থেকে বিলবাতা শিহাবের বাড়ি যাওয়া পর্যন্ত  প্রায় দেড় কিলোমিটার এবং সাধুর হাট থেকে চন্দনকোঠা গ্রাম পর্যন্ত দুই কিলোমিটার মাটির কাঁচারাস্তা। ওই রাস্তা দিয়ে শুষ্ক মৌসুমে কোনোমতে চলাচল করা গেলেও বর্ষা মৌসুমে রাস্তার খানাখন্দ ও গর্ত ভরে যায় বৃষ্টির পানিতে। তখন দেখে বোঝার উপায় থাকে না যে এটি রাস্তা নাকি ফসলের জমি। রাস্তার বেহাল দশার কারণে ভ্যান কিংবা অটোগাড়ি যেতে চায় না। নিরুপায় হয়ে কাঁদা মাটি দিয়ে পায়ে হেঁটে স্কুল-কলেজে যেতে হয় শিক্ষার্থীদের।

বর্তমানে বর্ষা মৌসুমে রাস্তাটি কাদামাটি ও বৃষ্টির পানির সংমিশ্রণে কাদার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। স্বাধীনতার এত বছর পরও পাকাকরণ করা হয়নি রাস্তাটি। জনপ্রতিনিধিরা ভোটের সময় প্রতিশ্রুতি দিলেও ভোটের পর আর তাদের দেখা মেলে না। স্থানীয়দের অভিযোগ, সবাই মিলে একাধিকবার স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার, উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় সংসদ সদস্যের কাছে রাস্তাটি পাকাকরণের জন্য দাবি জানিয়েছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা জুয়েল আহমেদ  বলেন, আমাদের জন্মের বহু বছর আগে পুরাতন এই কাঁচা রাস্তাটি রয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতে কিছু কিছু এলাকায় হাঁটু পর্যন্ত কাদা হয়ে যায়। এছাড়াও পাশের মাঠের সব ফসল এই রাস্তা দিয়েই বাড়ি নিতে হয়। এই রাস্তা দিয়েই কৃষিপণ্য বাজারজাত করা হয়। আমাদের এ কষ্ট কবে দূর হবে তার কোনো ঠিক নেই বলে আক্ষেপ করেন তিনি।

স্থানীয় শিক্ষক মুজিবর রহমান বলেন, প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে শতাধিক শিক্ষার্থী বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করে। তাদের চলতে খুবই সমস্যা হয়। জরুরি সেবার কোনো যানবাহন বা যেকোনো গাড়ি গ্রামে প্রবেশ করতে পারে না। অতি প্রাচীনকালের রাস্তাটি পাকাকরণ এখন সময়ের দাবি।

ওই এলাকার বাসিন্দা মামুনুর রশীদ বলেন,  অমৃত পুর গ্রামের ভিতর দিয়ে যে সড়কটি আছে সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বৃষ্টির দিনে রাস্তাটি ব্যবহারের একেবারে অনুপযোগী হয়ে পড়ে।

এ বিষয়ে তানোর উপজেলার কলমা ইউপি চেয়ারম্যান খাদেমুন্নবী বাবু চৌধুরী বলেন, আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবার পর কয়েকটি পাকারাস্তা সংস্কার করা হয়েছে। এখন পর্যায়ক্রমে মাটির কাঁচা রাস্তা পাকাকরণের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানানো হবে।

তানোর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) লিয়াকত সালমান বলেন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।